মহাগ্রন্থঃ আল-কুরআন (প্রথম অংশ)




আল-কুরআনের পরিচয়ঃ-

۞ আভিধানিক অর্থ আল-কুরআন শব্দটি উৎপন্ন হয় আরবি শব্দ "ক্বারউন" (পঠিত) বা "ক্বারনুন" (মিলিত থাকা) থেকে। যদি "ক্বারউন" (পঠিত) থেকে উৎপন্ন হয় তাহলে, আল-কুরআন অর্থ 'অধিক পঠিত'। যদি "ক্বারনুন" (মিলিত থাকা) থেকে উৎপন্ন হয় তাহলে, আল-কুরআন অর্থ পরিপুর্ণভাবে মিলিত। যেহেতু, কুরআন মজিদ সর্বাধিক পঠিত ও এর বিষয়বস্তুর মাঝে পরিপুর্ণ মিল রয়েছে, তাই এই মহাগ্রন্থের নাম আল-কুরআন। ۞ পারিভাষিক অর্থ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মানবজাতির হেদায়েতের জান্য হযরত জিব্রাইল (আঃ) এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুয়তের দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে যে কিতাব নাজিল হয়েছে তার সমষ্টিকে আল-কুরআন বলে। মহান আল্লাহ বলেন, هٰذَا بَیَانٌ لِّلنَّاسِ وَ هُدًی وَّ مَوۡعِظَۃٌ لِّلۡمُتَّقِیۡنَ অর্থ: এটা মানবমন্ডলীর জন্য বিবরণ এবং আল্লাহভীরুগণের জন্য পথ প্রদর্শন ও উপদেশ। [সুরা আলে ইমরান, আয়াত-১৩৮] ۞ আল-কুরআনের কয়েকটি নাম আল হুদা (পথপ্রদর্শক), আল কিতাব (গ্রন্থ), আল ফুরকান (পার্থক্যকারী), আন নূর (আলো), আজ্ জিকর (উপদেশ), কিতাবুম মুবিন (সুস্পষ্ট কিতাব), আল কালাম (কথাবার্তা), আল হিকমাহ (প্রজ্ঞা), আল বায়ান (বর্ণনা), হাবলিল্লাহ (আল্লাহর রজ্জ),, বুশরা (সুসংবাদ),‌ আল হাক্কু (সত্য), আল মাওইযাহ (উপদেশ), আল অহি (প্রত্যাদেশ), আশ শিফা (উপশমকারী) ۞ সূরা কুরআনে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। এই সূরাসমূহ ৩০ টি পারায় বিভক্ত। কুরআনের মোট আয়াত সংখ্যা ৬৬৬৬ টি মতান্তরে ৬২৩৬ টি, এর মধ্যে ১৪ টি আয়াত পড়লে বা শুনলে সিজদা দিতে হয়। আল-কুরআনে রয়েছে ৫৪০ টি রুকু, ৭ টি মাঞ্জিল। ۞ মাঞ্জিল কুরানপাঠকারী যেন এক স্পতাহে কুরআন সম্পূর্ণ পাঠ করতে পারেন, তাই কুরআনকে ৭ ভাগে ভাগ করা হয়, এই প্রত্যেকটি ভাগকে মাঞ্জিল বলা হয়। ۞ আল-কুরআনের ৭ টি মাঞ্জিল- ১. সূরা আল-ফাতিহা থেকে সূরা আন-নিসা। ২. সূরা আল-মায়িদা থেকে সূরা আত-তাওবা। ৩. সূরা ইউনুস থেকে সূরা আন-নাহল। ৪. সূরা বনী-ইস্রাইল থেকে সূরা আল-ফুরকান। ৫. সূরা আশ-শুরা থেক সূরা ইয়াসীন। ৬. সূরা আস-ছফফাগত থেকে সূরা আল-হুজুরাত। ৭. সূরা ক্বাফ থেকে সূরা আন-নাস। ۞ আয়াতের প্রকারভেদ আল-কুরআনের আলোকে আয়াত ২ প্রকার। যথা: ১. মুহকামাত (সুস্পষ্ট) ২. মুতাশাবিহাত (অস্পষ্ট) আল্লাহ তায়ালা বলেন, هُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ مِنۡهُ اٰیٰتٌ مُّحۡکَمٰتٌ هُنَّ اُمُّ الۡکِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِهٰتٌ ؕ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِهِمۡ زَیۡغٌ فَیَتَّبِعُوۡنَ مَا تَشَابَهَ مِنۡهُ ابۡتِغَآءَ الۡفِتۡنَۃِ وَ ابۡتِغَآءَ تَاۡوِیۡلِهٖ ۚ؃ وَ مَا یَعۡلَمُ تَاۡوِیۡلَهٗۤ اِلَّا اللّٰهُ ۘؔ وَ الرّٰسِخُوۡنَ فِی الۡعِلۡمِ یَقُوۡلُوۡنَ اٰمَنَّا بِهٖ ۙ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ رَبِّنَا ۚ وَ مَا یَذَّکَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ অর্থ: "তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।" [আলে ইমরান,আয়াত-৭] আল-হাদিসের আলোকে আয়াত ৫ প্রকার। যথা: ১. হালাল ২. হারাম ৩. মুহকাম ৪. মুতাশাবিহ ৫. আমছাল (উপদেশপূর্ণ ঘটনাবলি) এই সম্পর্কে হাদিসে আছে- আবু হুরায়রা (রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "রাসুল (সঃ) বলেছেন, কুরআন পাঁচটি বিষয়সহ নাজিল হয়েছে। হালাল, হারাম, মুহকাম, মুতাশাবিহ, আমছাল। সুতারাং তোমরা হালাল জানবে, হারামকে হারাম মানবে। মুহকামের উপর আমল করবে, মুতাশাবিহার প্রতি ঈমান পোষণ করবে। আমছাল থেকে শিক্ষা গ্রহন করবে।" (মিশকাতুল মাসাবিহ; ১৮২, এই হাদিসটির সনদ দুর্বল ) ۞ সূরাসমূহের প্রকারভেদ আল-কুরআনের সূরাসমূহকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ১. মাক্কি সূরা ২. মাদানি সূরা • মাক্কি সূরা রাসুল (সঃ) এর মাক্কি জিবনে অর্থাৎ হিজরতের পূর্বে নাজিল হওয়া সূরাসমূহকে মাক্কি সূরা বলা হয়। মাক্কি সূরার বৈশিষ্ট্য: ১. সূরা ও আয়াতগুলো ছোট ছটো ও ছন্দময়। ২. তাওহীদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কিত আলোচনা। ৩. মাক্কি সূরা ব্যক্তিগঠনে হেদায়েতপুর্ণ। ৪. আল কুরআনের সত্যতা ও ঈমান আকিদার আলোচনা। ৫. মানুষের ঘুমন্ত বিবেক ও নৈচিকতাবোধকে জাগ্রত করে চিন্তাশক্তিকে সত্য গ্রহনে উদ্বুদ্ধ করে। • মাদানি সূরা যেসব সূরা রাসূল (সঃ) এর মাদানী জীবনে অর্থাৎ হিজরতের পরবর্তী সময়ে নাজিল হওয়া সূরাসমূকে মাদানি সূরা বলা হয়। মাদানি সূরাসমূহের বৈশিষ্ট্য: ১. সাধারণত সূরাগুলো বড় ও গদ্যময়। ২. সামাজিক বিধিবিধান,ফৌজদারী আইন, উত্তরাধিকারী আইন, বিবাহ, তালাক ইত্যাদই বিষয়ে আলোচনা। ৩. যুদ্ধ, সন্ধি, জিজিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিবরণ। ৪. ইবাদত, আহকামে শরিয়ত, হালাল-হারামের বর্ণনা। Writer: Sayedus Suhada © JSSOL Blogs #blogsbyjssol #islamic #quran

Comments